দক্ষিণবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মামূন ন্যাশনাল স্কুল থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয় ‘উদার আকাশ’ প্রকাশন সংস্থার কর্ণধার ফারুক আহমেদকে
মামূন ন্যাশনাল স্কুলের পুনর্মিলন উৎসবের মিলনমঞ্চে, বিদ্যালয়ের সম্পাদক ও যোগ্য উত্তরসূরি কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ফারুক আহমেদকে সম্মাননা প্রদান করেন। এদিন উত্তরীয়, শাল ও মেমেন্টো দিয়ে ফারুক আহমেদকে সম্মানিত করা হয়।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক, বাগ্মী ও হাফেজ মরহুম গোলাম আহমেদ মোর্তজা (রহঃ) প্রতিষ্ঠিত ‘মামূন ন্যাশনাল স্কুল’-এ গত ১৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় ‘পুনর্মিলন উৎসব’।
এদিন সম্মাননা প্রদান করা হয় আহমদ হাসান ইমরানকে (প্রাক্তন সাংসদ, সভাপতি – পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও সম্পাদক – পুবের কলম), শেখ নুরুল হককে (প্রাক্তন আই.এ.এস. কর্মকর্তা ও বর্তমান জি.ডি. মনিটরিং কমিটির প্রধান), সৈয়দ নাসিরুদ্দিনকে (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আন্তঃসহায়ক ও জি.ডি. মনিটরিং কমিটির অন্যতম সদস্য), আমানউল্লাহ শাহকে (সম্পাদক, তৌহিদ মিশন), সফিকুল ইসলাম দুলালকে (বিশিষ্ট সাংবাদিক), সানাউল্লাহ মণ্ডলকে (প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, মামূন ন্যাশনাল স্কুল), কাজী মোঃ ত্বহসিনকে (হস্টেল সুপার), এবং শিক্ষক মণ্ডলীর পক্ষে মহঃ মোজাহারুল ইসলাম শাহকে (অ্যাডমিন ইনফরমেশন গ্রুপ) প্রভৃতিকে।
উপেক্ষিত ও অনগ্রসর শ্রেণির অভাব-অভিযোগ তুলে ধরে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ে সমাজকল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন ‘উদার আকাশ’ পত্রিকা ও উদার আকাশ প্রকাশন সংস্থার কর্ণধার ফারুক আহমেদ। অসংখ্য উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক তিনি। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই এই বঙ্গের নবচিন্তার অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। সমাজমনস্কতার ক্ষেত্রে তিনি দ্রুত পরিচিতি লাভ করেছেন। নতুন সমাজ ভাবনার মূল্যবোধকে সাহিত্যের পাতায় সাজিয়ে এক বিরল চিন্তাধারার সৃষ্টি করেছেন ফারুক আহমেদ। সাহিত্য সচেতন মানুষের কাছে ‘উদার আকাশ’ ইতিমধ্যেই এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছে। মানুষের জন্য বাঁচার আকাশ দেখাই সাহিত্যিক ফারুক আহমেদের আজীবন স্বপ্ন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নাটাপুকুর গ্রামে ১৯৮৩ সালের ৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন ফারুক আহমেদ। নাটাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঘটকপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ভাঙড় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক (বিজ্ঞান শাখায়) প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সুরেন্দ্রনাথ দিবা কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং এম.এস. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব লাইব্রেরি সায়েন্স-এ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এবং ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (প্রকাশনা ও পরীক্ষা) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১৬ সালে তিনি ইতিহাস বিভাগে পিএইচডি গবেষণা শুরু করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় — স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মুসলিম পরিচালিত মিশন স্কুলের অবদান। ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অলক কুমার ঘোষ তাঁর গবেষণা নির্দেশক। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম পাল ও প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মানস কুমার সান্যালসহ অনেক বিশিষ্ট অধ্যাপক তাঁর গবেষণা ও প্রকাশনার প্রশংসা করেছেন।
অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে বংশের প্রথম সদস্য হিসেবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তাঁর সহধর্মিণী মৌসুমী বিশ্বাসও বর্তমানে শিক্ষা বিভাগে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কর্মরত।
বর্তমানে ফারুক আহমেদ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউজলেটার ইনচার্জ ও রসায়ন বিভাগের অফিস কো-অর্ডিনেটর পদে কর্মরত আছেন।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ভাব ও ভাষায় সমৃদ্ধ ষান্মাসিক সৃজন সাহিত্যভিত্তিক পিয়ার-রিভিউড দ্বিভাষিক গবেষণা পত্রিকা ‘উদার আকাশ’ সম্পাদনা করছেন। কলেজ জীবনে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের সহযোগিতায় ২০০২ সালে প্রথম ‘উদার আকাশ’ প্রকাশ করেন। স্কুল জীবনে সাংবাদিকতার হাতে খড়ি, আর কর্মজীবনের শুরু কৃষিকাজ ও সংবাদপত্র বিক্রি দিয়ে।
‘উদার আকাশ’ প্রকাশন থেকে ইতিমধ্যেই ১২১টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘বিশ্বপ্রেম’। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলনগুলোর মধ্যে রয়েছে — ‘প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়ন’, ‘ফুরফুরা শরিফের পয়গাম’, ‘কংগ্রেস ও বামশাসনে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক’, ‘পশ্চিমে সূর্যোদয়: রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উলটপুরাণ’, ‘বিস্তীর্ণ আকাশ জুড়ে কাজী নজরুল ইসলাম’ এবং ‘বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম’। এছাড়া কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি গবেষণা গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন তিনি।
‘উদার আকাশ’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য — ‘সংখ্যালঘু ও মুখ্যমন্ত্রী’, ‘মর্যাদার সন্ধানে’, ‘আত্মপরিচয়ের অন্বেষণ’, ‘আত্মবিকাশের দর্পণ’, ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু’, ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’, ‘ভূমিপুত্রদের জাগরণ’ এবং ‘কুৎসার জবাব উন্নয়ন’। রাজ্য রাজনীতির পালাবদলের সন্ধিক্ষণে তাঁর এই প্রয়াস বঙ্গবাসীকে সচেতন করেছে।
ফারুক আহমেদ একাধারে কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সমাজসচেতন নাগরিক। তাঁর এই বিরল প্রতিভা ও মানবিক মূল্যবোধ নিঃসন্দেহে আমাদের সমাজকে সমৃদ্ধ করবে।
‘উদার আকাশ’ কেবল একটি পত্রিকা নয়, এটি আত্মমর্যাদার অভিজ্ঞান —
‘উদার আকাশ’ কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি সুস্থ সমাজ গড়ার অঙ্গীকার।
‘উদার আকাশ’ দিচ্ছে আহ্বান — ঘরে ঘরে সাহিত্যের আলো পৌঁছে যাক।

















