সেখ আমজাদ আলি, হুগলী: ফুরফুরা শরীফের ঐতিহাসিক ২১’ ২২ ‘২৩ শে ফাল্গুনের ঈসালে সওয়াব কে কেন্দ্র করে সাংবাদিক সম্মেলন করে একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী।
প্রতিবছরই অভিযোগ থাকে ফুরফুরা শরীফের এই ঐতিহাসিক ইসালে সওয়াবে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হলেও সেরকমভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি পরিষেবা দেয়না রাজ্য সরকার।
এবার তাই আগেভাগেই সমস্ত প্রস্তুতি সেরে রাখলো জেলা প্রশাসন, এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে ইসালে সওয়াবে সরকারি পরিষেবার বিবরণ তুলে ধরেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী তথা জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশীষ চক্রবর্তী।
ছিলেন ফুরফুরা শরীফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত, এছাড়াও ছিলেন জেলাশাসক ‘পুলিশ সুপার সহ জেলা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকরা।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রি স্নেহাশীষ চক্রবর্তী জানান, যেহেতু রমজান মাস চলছে সেক্ষেত্রে পুণার্থীদের সুবিধার্থে ইফতারের জন্য বিশেষ ছাউনি করা হয়েছে। যাতে রোজাদাররা সেখানে বসে ইফতার সারতে পারেন।
এছাড়াও হুগলি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘন্টার জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকেই গোটা ফুরফুরা শরীফ জুড়ে আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে, ৫০০০ মেটাল লাইট এবং অরনামেন্টাল লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে থাকছে হাই মাস্ট লাইটের ব্যবস্থা।
পূর্ণার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে অ্যাডিশনাল এসপি এবং ডিএসপি সহ জেলা পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের তত্ত্বাবধানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন।
০৪.০৩.২৫ থেকে ০৮.০৩.২৫ পর্যন্ত ফুরফুরা শরীফ থেকে ঈসালে সওয়াব স্পেশাল বেশকিছু বাস চলবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মন্ত্রী।
বারাসাত, হাওড়া স্টেশন, শ্রীরামপুর স্টেশন এবং বসিরহাট থেকে ফুরফুরা শরীফ পর্যন্ত চলবে এই বাসগুলি, এছারাও এসপ্ল্যানেড এবং সাঁতরাগাছি থেকেও ফুরফুরা শরীফ পর্যন্ত থাকবে বাস পরিষেবা।
আরামবাগ থেকেও ফুরফুরা শরীফ পর্যন্ত থাকছে বাস পরিষেবা।
এছাড়াও ঈসালে সওয়াব শেষ হওয়ার পরে ‘স্বচ্ছ বন্ধু’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক সমগ্র ফুরফুরা শরীফ কে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে পথে নামবেন।
পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জনের ক্ষেত্রে পূর্ণ্যার্থীদের আহ্বান জানাবেন এই সমস্ত স্বেচ্ছাসেবকরা, পরিবর্তে আগত পুণ্যার্থীদের হাতে একটি করে কাগজের ব্যাগ তুলে দেবেন তারা।
এছাড়াও পূণ্যার্থীদের শারীরিক সুস্থতার কথা মাথায় রেখে সকাল ৯টা থেকে রাত্রি ১১ টা পর্যন্ত ৫টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে সরকারি হাসপাতালে বিশিষ্ট চিকিৎসকরা থাকবেন।
পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ১০-১২ টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন রাখা হচ্ছে, এছারাও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে বাইক এ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ৩০ শয্যা বিশিষ্ট ফুরফুরা গ্রামীন হাসপাতালও ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে এই ৩ দিন। ঈসালে সওয়াবের এই তিন দিনকে সামনে রেখে ২০ টি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে, ৩০০ টি অস্থায়ী স্যানিটারি টয়লেটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে ফুরফুরা শরীফের বিভিন্ন জায়গায়। বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জল এবং ওজুখানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ফুরফুরা শরীফের বিভিন্ন পয়েন্টে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা মজুদ রাখা হচ্ছে, ফায়ার ব্রিগেডের বেশকিছু গাড়ি এবং ফায়ারের পদস্থ আধিকারিকরাও থাকবেন ২৪ ঘণ্টা। রাত পোহালেই ফুরফুরা শরীফের ঐতিহাসিক ইসালে সব শুরু হতে চলেছে, প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই ঈসালে সওয়াব কে কেন্দ্র করে, এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়, তাই আগেভাগেই সমস্ত প্রস্তুতি সেরে রাখল জেলা প্রশাসন।