আক্তারুল খাঁন, হাওড়া: আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম…মন কেমন করা পুরোনো দিনের সেই বিখ্যাত গানের সঙ্গেই যেন আজ হারিয়ে গিয়েছে হাতে লেখা চিঠির রেওয়াজ। তবুও ডাকবাক্স নিয়ে আজও গর্বিত ডাকবিভাগ।লাল রঙের লেটার বাক্স পোস্টকার্ড, খাম, ডাকটিকিট, মানি অর্ডার এসবের কথা দেশের মানুষ একরকম ভুলেই গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে বদলেছে দুনিয়া। এসেছে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার নানা সুবিধে। যে কারণে অনেকটাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে হাতে লেখা চিঠি আর সেই চিঠি জমা করার বহু পরিচিত লাল বাক্স বা লেটার বক্স। একসময় ডাকবাক্স থেকে বের হতে চিঠির পাহাড় এখন ডিজিটাল যুগ চিঠি লেখা ক্রমশই কমেছে। রাস্তার পাশে এখন আর সেই ভাবে দেখা যায় না পোষ্ট বাক্স। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে প্রযুক্তি। এক ক্লিকেই এখন হাতের মুঠোয় সব কিছু। ফলে ডাক বাক্সের প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে ফুরিয়েছে।চিঠি লেখার জায়গায় এখন হয়েছে ই-মেইল। অফিসিয়ালি কোন নথিপত্র হোক কিংবা চাকরির নিযুক্তি সবটাই এখন আসে ই-মেইলে। প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে পোষ্ট বক্সের প্রয়োজনীয়তা মলিন হয়ে গিয়েছে। গ্রামের দিকে ডাকের ব্যবস্থা থাকলেও শহরের দিকে তার গুরুত্ব একেবারে নেই বললেই চলে।
নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ভাবে ডাক বাক্সের পরিচয় নেই। তবে এখনও হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাট এলাকায় রাস্তার ধারে দেখা মেলে ছোট একটি ডাক বাক্স। স্থানীয় মানুষেরা জানান প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে ডাক বক্সের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেলেও এই গ্রামে এখনো ডাক বাক্সটি আছে । বাক্সটির মাথায় ছিদ্র হয়েছে বর্ষায় জল ঢোকে। আগের মত বিপুল পরিমাণ চিঠি না পড়লেও এখনো নিয়মিত ডাক বাক্স খোলা হয় আর বেরিয়ে আসে কখনো দুটো আবার কখনো চারটি চিটি। এই গ্রামের নতুন প্রজন্মরা নিয়মিত পরিচিত হচ্ছে ডাক বাক্সের সঙ্গে।
বছর পঁয়ষট্টির গোপিনাথ দাস,তাপস পাত্রদের কথায় একসময় চিঠিই ছিল মানুষের ভরসা। তখন মানুষ অপেক্ষায় থাকতো ডাক পিয়নের গলার আওয়াজের। এই বুঝি এলো প্রিয়জনের চিঠি। এখন আর সে অবস্থা নেই। সময়ের সঙ্গে বদলেছে দুনিয়া। এসেছে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার নানা সুবিধে। যে কারণে অনেকটাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে হাতে লেখা চিঠি আর সেই চিঠি জমা করার বহু পরিচিত লাল বাক্স বা লেটার বক্স। তবে মুন্সিরহাটের এই পোস্ট অফিসের ডাক বাক্স আজও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নিয়মিত খোলা হয় এই ডাক বাক্স। এখনো কিছু মানুষ চিঠি পত্র পাঠাই ডাক বাক্সের মাধ্যমে। অন্যান্য জায়গায় ডাকবাক্স না দেখা গেলেও আজও মুন্সিরহাটে ডাকবাক্স রয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে লাল রঙের ডাকবাক্সের সঙ্গে পরিচয়ও হচ্ছে। তারা জানান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে আর হয়তো এই ডাকবাক্স ব্যবহার হবে না, যে ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে টেলিফ্যাক্স ব্যবস্থা। তবে এই ডাক বাক্স যেন থাকে এটাই আমরা চাই। ভবিষ্যতের প্রজন্মরাও জানুক যে ডিজিটাল যুগ আসার আগেও তখনকার মানুষ এইভাবে বার্তা আদান-প্রদান করত। তাই মুন্সিরহাট গ্রামের মানুষের কাছে অতীতের হারিয়ে যাওয়া কৌলিন্য বুকে নিয়ে তাদের গর্ব এই পোস্ট বাক্স এখনও আছে।
হাওড়া জেলা ডাক বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, চিঠি হল ডাক বিভাগের হৃদয়। আজও আমাদের কাছে এই পরিষেবা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা এই ডাক ব্যবস্থার জন্মের সময় ছিল। আজও আমাদের হাওড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে যত্ন সহকারে সাধারণ মানুষের জন্য রাখা আছে ডাকবাক্স এবং এই বিভাগের কর্মীরা কর্তব্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের নিত্যদিনের পরিষেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে চলেছেন।























