আক্তারুল খাঁন, শ্যামপুর: নারী দিবস কী জানে না দিনমজুর নারীরা। তারা শুধু জানে কাজ করলে টাকা পাওয়া যাবে, কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না– এটাই আমাদের দিবস।এইভাবে কথাগুলো বললেন হাওড়া শ্যামপুরের ডিহি মন্ডল ঘাট-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দক্ষিণ মুসলিম পাড়ার আজমীরা খাতুন।স্বামী সেখ নাসির আলি-র কয়েক বছর ধরে ঠিকমতো কাজই জোটে না।তাই বাপের বাড়িতেই থাকেন আজমীরা।রূপনারায়ণ নদের পাড়ে বসবাস স্বামী ও ছেলেদের নিয়ে। আজমীরার তিন ছেলে। যাদের মধ্যে একজন মূক-বধির। ছেলেদের পড়াশোনা এবং সংসার চালাতে নিরুপায় হয়ে ইটভাটাই কাজ করতে নেমেছে বছর ত্রেত্রিশের আজমিরা খাতুন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে দিনের শেষে ২২০ টাকা রোজগার আজমিরার।আজমীরা বলেন,কোনোদিন নারী দিবসের কথা শুনিনি। আজ প্রথম শুনলাম। সংসার চালাতে প্রতিদিন সকালে ইটভাটায় কাজে চলে আসি।কাজ না করলে সংসার চলবে না। তবে নারীদের জন্যও একটি বিশেষ দিবস আছে, কথাটি শুনে ভালোই লাগলো। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শনিবার ( ৮ মার্চ)হাওড়ার শ্যামপুরের ইটভাটা গুলিতে দেখা যায় আজমীরা ছাড়াও কাজ করছেন আনসুরা বিবি,রশিদা বিবি,রিনা দাসরা।
বহু বছর আগে স্বামী মারা গেছেন আনসুরা বিবির তিনি বলেন, স্বামী মারা যাবার পর এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি ইটভাটায় কাজ করে নিজের পেট চালাতে হয়। নারীদের জন্য যে কোন দিবস আছে জেনে ভালো লাগলো। তবে যদি এই দিনটাতে ছুটি থাকত তাহলে আরো ভালো হতো। তবে টাকা কাটলে ছুটি দরকার নেই। একদিন কাজ না করলে সংসার চলবে না।
শ্যামপুরের আর এক ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন রশিদা বিবি তিনি বলেন, স্বামী দিনমজুরের কাজ করতেন। বছর ঘুরতে চললো স্বামী মারা গেছেন।দশ বছরের এক ছেলে রয়েছে। বর্তমানে তাকে নিয়েই সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারের দায়িত্ব পড়ে আমার কাঁধে। দিশা না পেয়ে ইটভাটায় কাজ শুরু করি।নারী দিবসের কথা কখনও শুনিনি উল্লেখ করে রশিদা বলেন, এই দিবসে কী হয় বা কী করে তাও জানি না। দিবসের কথা শুনে কী লাভ হবে। একদিন কাজ বন্ধ থাকলে সংসার চলবে না। তবে ২২০ টাকা রোজগার করা এখন খুব কঠিন।
একই এলাকায় ইটভাটায় কাজ করেন রিনা দাস। তিনি বলেন সকালে কাজে যোগ যোগ দিতে হয় বাড়ি ফিরি সেই সন্ধ্যায়।একদিন কাজ বাদ দিলে সংসার চলে না। সারাদিন কাজ করেই সময় চলে যায়।কবে কোন দিবস যাচ্ছে, সেটা বলতে পারবো না। নারী দিবসের কথা আজ প্রথম শুনলাম। আমরা শ্রমিক মানুষ, নারী দিবস দিয়ে কী করবো। তবে নারী দিবসের কথা শুনে খুশি হলাম। এই দিনে কী হয়, তা বলতে পারবো না।
























