দক্ষিণবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করতে চায় তৃণমূল। তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে এই মর্মে ভাবনাচিন্তা চলছে। সে ভাবনার কথা ইতিমধ্যে রাজীবের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যদিও বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করায় রাজীব দাবি করেছেন, তাঁকে কেউ কিছু বলেননি। তিনি এমনকিছু জানেনও না। তাঁর কথায়, ‘‘আমায় কেউ কিছু বলেননি। আমি জানিও না। এই প্রথম শুনলাম।’’ রাজীবের বক্তব্য, এর পুরোটাই ‘রটনা’।
প্রসঙ্গত, গত বেশ কয়েকদিন ধরে রাজ্যের সমস্ত জেলার ব্লক ধরে ধরে বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে নেতানেত্রীদের নিয়ে বৈঠক করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু জেলার বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির বৈঠক হয়ে যাবে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। বাকি থাকবে একটিমাত্র বিধানসভা কেন্দ্র। নন্দীগ্রাম। গোটা একটি দিন রাখা হয়েছে নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকের জন্য। সূত্রের খবর, ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও একটি দিন ওই বৈঠক হতে পারে। যা থেকে স্পষ্ট যে, নন্দীগ্রামকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে শাসকদল। সেই সূত্রেই এখন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। রাজীবের নামও এসেছে সেই নিরিখেই।
কিন্তু রাজীব কেন? প্রথমত, নন্দীগ্রামে তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। বারংবার বলেও তা মেটানো যায়নি। ফলে সেখানে তৃণমূল এমন কাউকে প্রার্থী করতে চায়, যাঁর সঙ্গে স্থানীয় স্তরের রাজনীতির নিবিড় কোনও সম্পর্ক নেই। প্রসঙ্গত, যেখানে গোষ্ঠীকোন্দল তীব্র এবং প্রার্থিপদের একাধিক দাবিদার থাকে, সেখানে বাইরের কাউকে প্রার্থী করা বা কোনও ‘তারকা’ মুখকে ভোটে দাঁড় করানো তৃণমূলের পুরনো কৌশল। দ্বিতীয়ত, নন্দীগ্রামের স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মধ্যে এমন কোনও ‘ওজনদার’ নাম নেই, যাঁকে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামানো যায়। সে দিক থেকে রাজীবের একটা পরিচিতি রয়েছে। তৃতীয়ত, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুক লোকসভায় দলের পর্যবেক্ষক ছিলেন রাজীব। তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের ভোটে রাজীব বাড়তি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নন্দীগ্রাম তমলুক লোকসভার মধ্যেই। দু’বছর আগে তমলুকের দায়িত্ব পালনের সুবাদে কোলাঘাট থেকে হলদিয়া পর্যন্ত সব এলাকায় রাজীব প্রচুর সাংগঠনিক বৈঠক করেছিলেন। বস্তুত, জনসভার তুলনায় এলাকায় এলাকায় বৈঠকেই বেশি নজর দিয়েছিলেন। ফলে ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে তিনি আগে থেকেই পরিচিত। এলাকার রাজনীতির ‘জটিলতা’ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। তমলুকে দেবাংশু হেরে গিয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। হারের পরে দলের অন্দরে ‘অন্তর্ঘাত’-এর অভিযোগ করেছিলেন দেবাংশু। দলের মতে, সে সব একেবারে ‘ভিত্তিহীন’ ছিল না। তবে সার্বিক ভাবে রাজীবের ভূমিকায় সন্তুষ্টই ছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।
রাজীবকে নন্দীগ্রামে দাঁড় করানোর এই ভাবনা থেকে এটিও স্পষ্ট যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াবেন না। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। ভোটগণনায় নাটকীয় সব ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত ১,৯৫৬ ভোটে জয়ী হন বিজেপির শুভেন্দু। যদিও নন্দীগ্রামের ভোটগণনা নিয়ে মামলা হয়েছিল হাই কোর্টে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।